ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
অন্য পুরুষের সাথে অসামাজিক কাজে রাজি না হওয়ায় এক গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন তার স্বামী। এ সময় ওই গৃহবধূকে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত রোববার ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বড়বাড়ী ইউনিয়নের মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের ডাঙ্গীবাজার থেকে ওই গৃহবধূর স্বামী আমিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আমিরুল ইসলাম ওই এলাকার মৃত ফতে আলীর ছেলে। পেশায় কবিরাজ। এর আগে তিনি একাধিক বিয়ে করছেন বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। অন্য স্ত্রীগুলোও তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সংসার ছেড়েছেন।
নির্যাতিতা গৃহবধুর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে। নির্যাতনের শিকার হয়ে ওই গৃহবধূ উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানান, এক যুগের বেশি সময় ধরে স্বামীর সংসার করছেন তিনি। অল্প ভুল পেলেই বাড়ির গেট বন্ধ করে লোহার রড দিয়ে মারধর করতেন স্বামী আমিরুল। গত দুবছর ধরে পর পুরুষের সাথে মেলামেশার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন তার স্বামী আমিরুল। রাজি না হওয়ার অনেক মারপিটের শিকার হতে হয়েছে তাকে। সর্বশেষ গত শনিবার বালিয়াডাঙ্গী বাজারে এসে দুসম্পর্কের স্বজনদের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন ওই গৃহবধূ।
বিচার প্রার্থনা করায় ওই দিন বিকাল ৩ টার দিকে আমিরুল ক্ষেপে গিয়ে বাজার থেকে টেনে হিচড়ে বাড়িতে নিয়ে আবার তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে ব্লেড দিয়ে তার মাথার চুল কেটে দেন। নির্যাতনের শিকার ওই নারী আর সংসার করতে চান না। নির্যাতনের বিচার চান। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে প্রয়োজনে অন্য কোথায় থাকতে চান।
আশ্রয়দাতা মিজানুর রহমান জানান, ঘটনার শুনার পর আমি পুলিশের সহায়তায় নিয়ে গত রোববার গৃহবধূকে উদ্ধার করে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছি। আশ্রয় দেওয়ার কারণে মোবাইলে আমাকেও হুমকি দিয়েছেন আমিরুল।
গৃহবধুর প্রতিবেশী ফরিদা বেগম ও নিহার বেগম জানান, আমিরুল তার স্ত্রীকে যখন মারপিট করে তখন সেখানে যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। স্ত্রীর কাপড় চোপড় খুলে গেট বন্ধ করে লোহার রড দিয়ে মারপিট করে। চুল কেটে দেয়ার সময় আমরা বাহির থেকে দেখলেও ভিতরে যাওয়ার সাহস পায়নি।
প্রতিবেশী আমিরুল ইসলাম জানান, চুল কেটে দেয়ার পর তার স্বামী মোবাইলে স্ত্রীর ভিডিও স্বীকারোক্তি নিয়েছেন। যদি কোনো শালিস বৈঠক বসে, সেখানে যেন বলে, গৃহবধূ স্বামী তার চুল কেটে দেয়নি। নিজেই নিজের চুল কেটেছে।
স্থানীয় সিনিয়র সাংবাদিক হারুন অর রশিদ জানান, আমিরুলকে বেশ কয়েকবার আমি সতর্ক করেছি। আমিরুল শোনেনি। এমন জঘন্য কাজ সে করবে, এটা কল্পনা করিনি। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়ার উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বারিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল হক প্রধান জানান, পুলিশ গৃহবধূকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। দুদিন ধরে অভিযান চালিয়ে অবশেষে আমিরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় গৃহবধূ বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক জানান, গৃহবধূকে নির্যাতনের কথা শুনেছি। ইতিমধ্যে ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।