নিজস্ব প্রতিবেদক
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মানিকদিপা দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবুল কালাম আজাদ ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়ের করা অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।
দুদকের দেয়া এক চিঠির প্রেক্ষিতে অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আহমেদ।
২০২০ সালে ২৫ অক্টোবর মাদ্রাসার সুপার আবুল কালাম আজাদ ও ম্যানেজিং কমিটির তৎকালিন সভাপতি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ ও ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগ বানিজ্যে অভিযোগ তুলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন শফিকুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি।
অভিযোগ উল্লেখ করা হয়, সুপার আবুল কালাম আজাদ গত ১জুলাই ২০১০ইং সাল থেকে আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যক্তি সভাপতি পদে রেখে দিয়েছেন। এই দুজনের যোগসাজসে ১০ বছরে মাদ্রাসার নামীয় নিজস্ব অনেক জমি বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন দুজনই।
এছাড়া তাদের অপকর্ম ঢাকতে তাদের অনুসারি আব্দুর রউফ নামের এক ব্যক্তিকে মাদ্রাসা কমিটির দাতা সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছেন। শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী ২ লাখ টাকা দান করে দাতা সদস্য হওয়ার বিধান থাকলেও আব্দুর রউফ মাত্র ৪ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক দুই শতাংশ জমি দিয়ে দাতা সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছেন, মাদ্রাসাটির কলা বিভাগ, বিজ্ঞান বিভাগ নিমিত্তে ২০১৫ সালে আবু রায়হান নামের একজনকে বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন মাদ্রাসা কমিটি। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগ চালুর অনুমতি না পাওয়ায় ওই শিক্ষক ৪ বছর অনুপস্থিত থাকেন। কিন্তু চলতি বছরের আগষ্ট মাসে বিজ্ঞান শিক্ষক আবু রায়হানকে ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু ভৌত বিজ্ঞান শিক্ষক নিয়েগে যা এনটিআর সিএ দেওয়ার কথা ছিল। একই সাথে একজন আয়া, একজন নিরাপত্তা কর্মী এবং একজন গ্রস্থগারিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব নিয়োগ দেয়া হয়েছে বৈশ্বিক করোনা কালীন সময়ে রাতের অধাঁরে।
এই নিয়োগ বানিজ্যের পর করোনা কলীন সমেয় ম্যানেজিং কমিটি এবং শিক্ষক ষ্টাফ কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমনে যান।
অভিযোগ সরেমিজন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাদ্রাসার সুপার এবং সভাপতির যোগসাজশে খড়ণার মরজিনা খাতুনের নিকট দশমিক ৪ শতাংশ, যাহার দলিল নং ২১৩৩, মানিকদিপা পূর্বপাড়ার আব্দুল মান্নানের নিকট দশমিক ৪ শতাংশ, যাহার দলিল নং ২১৩২, শাহিনুল ইসলামের নিকট দশমিক ৪ শতাংশ, যাহার দলিল নং ২১৩১, পদ্মপাড়ার আরিফুল ইসলামের নিকট দশমিক ৮ শতাংশ, যাহার দলিল নং ২৭০০, বিন্যাচাপড়ের সাইফুল ইসলামের নিকট দশমিক ৭ শতাংশ, যাহার দলিল নং ৯৩১৪। আর এসব জমি মাদ্রাসার পক্ষে বিক্রি করেছেন সুপার আবুল কালাম আজাদ। যা বাজার দরের চেয়েও স্বল্প মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে তিনি বলেন, “যা বলার ইউএনও কে বলা হয়েছে। কিছু জানতে চাইলে তার কাছ থেকে জেনে নেন।”
অভিযুক্ত মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আলমগীর হোসেন জানান,
“নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে কিছু পরিত্যাক্ত জমি বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানের কাজ করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়েও কোন অনিয়ম করা হয়নি।”
অভিযোগকারি শফিকুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি বলেন,
“মাদ্রাসাটি রক্ষা করতে দুর্নীতিবাজ সুপার এবং সাবেক সভাপতির উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি আফসারুল হাবীব সুমন বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়ম দূর্নীতি মেনে নেয়া যায় না। সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষ্যে এর বিচার হওয়া উচিৎ।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ জানান,
“অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যথা সময়ে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।”