সম্প্রতি লোকাল কুরিয়ার ও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিদেশ যাচ্ছে মাদকদ্রব্য ইয়াবা। সর্বশেষ চলতি মাসের এক তারিখে ইয়াবার একটি চালান আন্তর্জাতিক এক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশ থেকে আমেরিকার ব্রুকলিনে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল ইয়াবা কারবারিরা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে, আকাশে উড়ার আগেই সেই চালান ধরে ফেলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা শাখা সূত্র বলছে, চলতি বছরের জুন মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৪ টি চালানে ২১ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। চালানগুলো আমেরিকা ও সৌদি আরবেও যাচ্ছিল। চালানের প্রেরক ও প্রাপকের ঠিকানা ঠিক থাকলেও নাম-পরিচয় ভুয়া ছিল। তবে গোয়েন্দাদের ধারণা, চালানে ইয়াবার সংখ্যা ও পাঠানোর পদ্ধতিতে মনে হয়েছে, এটা বাণিজ্যিক না পার্সোনাল চালান হবে। তবে এই চক্রটিও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
মাদকদ্রব্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ছয় মাসের এই ১৪ চালানের ঘটনায় ৯ টি মামলা ও চারটি জিডি করা হয়েছে। এ বছরের প্রথম চালান ধরা পড়ে জুন মাসের ৬ তারিখে। তার পরের মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে ৫ ও ৬ তারিখে একই ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসে অভিযান চালিয়ে চালান আটক ও মামলা দায়ের করা হয়। তাছাড়া নভেম্বরের ১১, ১৮ ও ২৪ তারিখে পর পর তিনটি অভিযান চালিয়ে আমেরিকার পথে যাওয়া ইয়াবার চালান আটক করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফরের সহকারী পরিচালক গোয়েন্দা রামেশ্বর দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমেরিকা ও সৌদি আরবে ইয়াবা চালান পাঠানোর ঘটনায় যে ৯ টি মামলা হয়েছে। মামলারগুলোর তদন্তের কাজ চলছে। তদন্তের স্বার্থে কুরিয়ার সার্ভিসসহ কিছু তথ্য দিতে পারছি না। তবে তদন্তে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, কুরিয়ার সার্ভিসে প্রেরকের যে ঠিকানা দিয়ে চালান পাঠানো হয়েছে। সে ঠিকানাতে ঐ ব্যক্তিদের খুঁজতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। এমনকি এনআইডি নাম্বার নাম ঠিকানা বা ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলোও ভুয়া ছিল। এমন অবস্থায় আমাদের আসল অপরাধীদের খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে যে ঠিকানায় পাঠানো হয়েছিল সেটিও বিদেশি নাগরিকের ঠিকানা। তাই তাদেরও খুঁজে পাওয়া সম্ভব না। তবে ইতিমধ্যে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদির চালানের ক্ষেত্রে দূতাবাসকে চিঠি পাঠিয়েছি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা শাখা বলছে, হঠাৎ করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদক চালান বেড়ে যাওয়ায়। আমরা প্রথমবারের মতো কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কর্মশালা করেছি। কর্মশালায় আমরা সুপারিশ করেছি ব্যাংকের মতো কুরিয়ার সার্ভিসকেও জাতীয় পরিচয় পত্রের অ্যাক্সেস দিতে। সেক্ষেত্রে কেউ মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করার কোন সুযোগ পাবে না। প্রাপক, প্রেরক এর পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা মোবাইল নাম্বার এবং জাতীয় পরিচয় পত্র চেক করে নিতে পারবে। পাশাপাশি কুরিয়ার সার্ভিস গুলো আধুনিক ও উন্নত মানের ড্রাগ ডিটেক্টর স্থাপন এবং ভাল মানের সিসি টিভির মাধ্যমে ভিডিও রেকর্ডিং এর ব্যবস্থা করবে।
এ বিষয়ে কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (সিএসএবি) সভাপতি হাফিজুর রহমান পুলক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাদকদ্রব্য অধিদফতরের সঙ্গে আমাদের যে কর্মশালা হয়েছে। তারা সুপারিশ করেছেন, ব্যাংকের মতো আমাদেরকে যেন এনআইডি চেক করার অ্যাক্সেস দেওয়া হয়। এতে সিপ্লারের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। তাছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে যখন এটা বলা হবে, আমরা সেটা বাহিরের ঝুলিয়ে রাখবো। সে ক্ষেত্রে মানুষ আমাদের কথাতেও সাড়া দেবে। এখন এনআইডি চাইলেও আমাদের কাস্টমারদের কাছে তেমন সাড়া পাই না।
কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের এই সভাপতি বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসে যখন মাদক ধরা পড়ে। তখন এটা আমাদের ব্যবসার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আমরাও চাই নিরাপদ ব্যবসা করতে। আমাদের পক্ষ থেকে যতটা সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে করবো।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মগহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, আসলে এভাবে এনআইডির পুরো অ্যাক্সেস দেওয়া অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে তথ্যের অপব্যাবহার হতে পারে। তবে সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগলে, আমরা বেসিক কিছু তথ্যের অ্যাক্সেস দিতে পারি। যেগুলো দিয়ে কোন আইডির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাবে। সরকার চাইলে আমরা অবশ্যই সেটা দিব।(সূত্র; বাংলা ট্রিবিউন)