গিয়াস উদ্দিন টিক্কা, স্টাফ রিপোর্টার
বগুড়ার ধুনটের এলাঙ্গী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ তারেক হেলালের অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।
করাত কলের মিস্ত্রী থেকে আওয়ামীগ নেতা চেয়ারম্যান হেলাল গত ১০বছরে জমি দখল, মদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বানিজ্য,সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ লোপাট করেছেন। তিনি সরকারী জলাধার দখল করে বহুতল ভবন , ডেনরী ফার্ম , স্ত্রী সন্তানদের নামে জমি কেনা সহ নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার তহবিল গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় ও দুদক বগুড়ার সমন্বিত কার্যালয়ে নামে বেনামে পাঠানো একাধিক অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের ইদ্রিস আলী ফকিরের তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে এম এ তারেক হেলাল তৃতীয় । তিনি পৈত্রিক সুত্রে তিন বিঘা জমি পাওয়ার পর মদ, জুয়া, নারী কেলেংকারী সহ নানা অসামাজিক কাজে জড়িত হয়ে ওই তিন বিঘা জমি বিক্রি করে পথে বসেন। পরবর্তীতে এলাঙ্গী বাজারে একটি ‘স’ মিল(করাত কল) বসিয়ে নিজেই মিস্ত্রির কাজ করে জিবিকা নির্বাহ করেন।
২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর হেলাল করাত কলের মিস্ত্রি থেকে এলাঙ্গী ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১১ সালে প্রথমবার দলীয় টিকিটে এলাঙ্গী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
দলের ত্যাগী নেতা কর্মীরা জানান, খুব কম সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের আস্থা ভাজন হয়ে ওঠেন হেলাল চেয়ারম্যান। তিনি সন্ত্রাসী বাহীনি গড়ে তুলে এলাঙ্গী বাজারে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রন, জুয়ার আসর পরিচালনা, দখল বানিজ্যে নেমে পড়েন ।
২০১৫ সালে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও নৌকা মার্কা নিয়ে দলীয় টিকিটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ।
এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য তোজাম্মেল হক , ৮নং ওয়ার্ডের জয়নাল আবেদীন, ৭, নং ওয়ার্ডের বাবুল ৫নং ওয়ার্ডের মাসুদ রানা ১নং ওয়ার্ডের আব্দুর রশিদ ,২নং ওয়ার্ডের ডাবলু মিয়া বলেন, আমাদের ভয়ভিতি দেখিয়ে চেয়ারম্যান হেলাল গত ১০ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মশৃজন প্রকল্প, ভি,জি,ডি, ভি,জি,এফ,বয়স্ক ভাতা , বিধবা ভাতা, পঙ্গুভাতা গর্ভবতী ভাতার কার্ড টাকার বিনিময়ে বিতরন করেছেন, টিআর ,কাবিখা,কাবিটা , এডিপি সহ সামাজিক নিরাপত্তা মুলক বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে কোটি কোটি টাকা আত্নসাত করেছেন। প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দরিদ্র ও গৃহহীন মানুষদের নামে রাঙ্গামাটি ধুলাউড়ি এলাকায় নির্মান করা আশ্রায়ন প্রকল্পের ১০৫ টি পরিবারের মধ্যে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে টাকার বিনিময়ে। যারা টাকা বিনিময়ে ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন রাঙ্গামাটি গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম ও সৈয়দ আলী অন্যতম। শহিদুল ইসলাম ৪ বিঘা জমির মালিক এবং আশ্রায় প্রকল্পের পাশের পৈত্রিক সম্পত্তির উপর ঘরবাড়ি রয়েছে তার। অথচ তাকে গৃহহীনদের ৪টা ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জমিজমা ঘরবাড়ি থাকার পরও শহিদুলের ভাই সৈয়দ আলীকেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২টা ঘর।
এলাঙ্গী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সুমন সরকার (তৎকালীন হেলাল বাহিনী সদস্য) বলেন, ২০১৫ সালে রাতে পুলিশ এলাঙ্গী বাজারে মাদক বিরোধী অভিযান চালানোর সময় হেলাল চেয়ারম্যান তার বাহিনী নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে ৪/৫ জন পুলিশ সদস্যকে আহত করেছিল।
সে সময়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত ধুনট থানার ওসি মিজানুর রহমান (বর্তমানে ঢাকা এসবিতে কর্মরত) বলেন, মাদক বিরোধী অভিযানে পুলিশের উপর হামলার চালিয়ে ৪/৫ জন পুলিশ সদস্যকে আহত করার অভিযোগে চেয়ারম্যান হেলাল সহ ১০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং আদালতে চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলীয় কয়েকজন নেতা জানান, হেলাল চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে রাঙ্গামাটি খায়রুল উলুম দাখিল মুদ্রাসা ও এলাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ দখল করে ৮ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এক কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্য করেছেন।
এলাঙ্গী গ্রামের জিয়াউর রহমান বলেন, হেলাল চেয়ারম্যান অবৈধ ভাবে তার এলাঙ্গী বাজারের তার প্রায় ১০ লাখ টাকা মুল্যে ১০ শতক জমি দখল করেছেন। এক সময়ের যার ৩ বেলা ভাত জুটতো না তিনি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
জ্ঞাত অর্থ দিয়ে এলাঙ্গী বাজার সংলগ্ন হলহলিয়া খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মান ও ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলেছেন। সরকারী খাল দখল করে পানির প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১হাজার বিঘা জমির জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, এবিষয়ে মুখ খুললেই তাকে প্রান নাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এম এ তারেক হেলাল, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার কিছু শত্রু আছে তারা আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে।
দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, এলাঙ্গী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ তারেক হেলালের বিরুদ্ধে সামাজিক নিরাপত্তা মুলক প্রকল্পের তদন্ত অব্যহত আছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি বেশী কিছু বলতে রাজি হননি।