:: হাকীম এফ শাহজাহান ::
করোনাভাইরাস সংক্রমনে কোভিড-১৯ রোগের আপাতত কোন কার্যকর ওষুধ না থাকার কারনেই বিশ্বজুড়ে এটি মহামারিতে রুপ নিয়েছে। তবে করোনার এই ক্রান্তিকালে হাতের কাছে থাকা সহজলভ্য ইউনানী ওষুধ আপনাকে স্বস্তি যোগাতে পারে।
৮ হাজার বছর আগে থেকে এসব ন্যাচারাল মেডিসিন বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
একসময় রাজা বাদশাহদের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা ছিল এসব ন্যাচারাল মেডিসিন।
সম্রাটদের হেরেমের সুস্বাস্থ্য রক্ষা এবং রোগ নিরাময়ে ইউনানী চিকিৎসা বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছে।
তাই একুশ শতকের এই মহামারিতেও ভেষজ ওসুধ আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে।
করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে এবং কোভিড-১৯ চিকিৎসায় অম্বগন্ধা, যষ্ঠিমধুর ন্যায় পিপুল বেশ কার্যকর সুফল দিতে পারে।
পিপুলের মত বহুল ব্যবহৃত এবং বহু রোগ নিরাময়কারী হিসেবে প্রমানিত ভেষজ ওষুধ করোনায় ব্যবহার করে আপনি স্বস্তি ও সুফল পেতে পারেন।
বিশেষ করে করোনার বড় দুটি উপসর্গ জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে ইউনানী ভেষজ পিপুল বেশ কার্যকর ভুমিকা পালন করতে পারে। সহজে সস্তায় সবখানে পাওয়া যায় বলে করোনা মহামারিতে পিপুলের ব্যবহার বেশ সুফল দিতে পারে।
পিপুলের মধ্যে পিপারলংগুমিনাইন নামক রাসায়নিক যৌগ থাকায় তা বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমন এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এছাড়াও পিপুলে রয়েছে পিপারিন, পিপলারটাইন, পিপারনোলিন, লং এমাইড, পিপারলংগিন, পিপারসাইড, পেল্লিটোরিন, বিভিন্ন এসেনশিয়াল অয়েল ।
পিপুলের শিকড়ে রয়েছে পিপারিন, স্টেরয়েডস, গ্লুকোসাইডস, পিপেলারটিন ও পিপারলংগুমিনাইন নামক রাসায়নিক উপাদান।
করোনায় যাদের শ্বাসকষ্ট হয়, বুকে হাঁপ ধরে, তারা স্বাভাবিক খাবার গ্রহণের কিছুক্ষণ পরে পিপুলচূর্ণ ২৫০ মিলিলিটার সামান্য গরম ১ কাপ পানিতে গুলে খেতে পারেন।
করোনায় শ্বাস কষ্ট কমানোর জন্য ২ গ্রাম পিপুল ফল একটু থেঁতো করে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ২-৩ ঘণ্টা পর পর তা ৩-৪ বারে খেতে পারেন।
করোনার একটি বড় উপসর্গ কাশি আর জ্বর। এরূপ অবস্থা হলে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে ও পরীক্ষা করাতে হবে।
তার আগে পিপুলচূর্ণ ২৫০ মিলিলিটার সামান্য গরম জলে গুলে সকাল-বিকেল অর্থাৎ দিনে দুইবার খেতে হবে। এভাবে ৪-৫ দিন খাওয়ার পর সেটা চলে যেতে পারে। যদি না যায়, তখন অবশ্যই যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা করাতে হবে।
করোনায় কাশি আর জ্বরে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে, চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়, চোখ ফ্যাকাসে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে ২৫০ মিলিগ্রাম পিপুল চূর্ণ ৫/১০ ফোঁটা ঘি মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে কয়েক দিনের মধ্যেই জ্বর সেরে যাবে ইনশাআল্লাহ।
করোনা সংক্রমনের প্রধান উপসর্গ নিরাময় ছাড়াও আরো অন্যান অসুখে পিপুল কার্যকর সুফল দেয়। কণ্ঠ রোগ, তৃষ্ণা রোগ, শিরো রোগ, হিক্কা, কাশি, শূলরোগ নিরাময় করে।
দেহের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় পিপুল কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফুসফুসের ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, আন্ত্রিক ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, মস্তিষ্কেও টিউমার, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের বিরুদ্ধে পিপুল কার্যকর।
শরীরের ক্ষতিকর মেদ কমাতে, হাঁপানি সারাতে, দাঁত ব্যথা সারাতে এবং হৃদরোগে পিপুল বেশ ভালো কাজ করে। অর্শ নিরাময়ে পিপুলের বহুল ব্যবহার রয়েছে।
তবে আমরা এই করোনা মহামারির সময়ে জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট সারাতে পিপুলের ব্যবহার করে স্বস্তি পেতে পারি।
কোথায় পাবেন ?
আপনার শহরের বাজারে বেনেতি দোকানে অথবা মশলার দোকানে আপনি পিপুল কিনতে পারবেন। দাম সাধারন মশলার দামের মতই।
নাটোরে কোনো কোনো চাষি স্বল্প আকারে চাষ করেন।
কীভাবে খাবেন ?
পিপুলের শিকড় ও ফল ব্যবহৃত হয়। সাধারণ পিপুল ফলের গুঁড়া আধা থেকে ১ গ্রাম পরিমাণ এক মাত্রা হিসেবে রোজ সেবন করা হয়।
পিপুলচূর্ণ ২৫০ মিলিলিটার সামান্য গরম জলে গুলে সকাল-বিকেল অর্থাৎ দিনে দুইবার খেতে হবে।
২ গ্রাম পিপুল ফল একটু থেঁতো করে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ২-৩ ঘণ্টা পর পর তা ৩-৪ বারে খেতে পারেন।
সতর্কতা :
দুধের শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতিদের পিপুল খাওয়ানো চলবে না।
মাত্রারিক্ত সেবনে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে।
অপরিশোধিত পিপুল বেশি দিন সেবন করলে অন্ত্র ফুলে যেতে পারে এবং দেহের তাপমাত্র বেড়ে যেতে পারে।
সুস্বাস্থের সুখবর
লেখক : হাকীম এফ শাহজাহান
হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,বগুড়া।