একে আজাদ:
ঘুরছে না রিকশার চাকা। উপার্জন প্রায় বন্ধ। প্রতিদিন জমার টাকা ওঠানোর দুশ্চিন্তা তো আছেই, অথচ শ্রমসাধ্য এই কাজে জুটছে না সামান্য আহার। বগুড়া শহরের যে রিকশা চালকেরা মাসখানেক আগেও ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে আজ তাদের কপালে দুশ্চিন্তার গাঢ় ভাঁজ।
শুক্রবার দুপুরে শহরের মেহেরুন্নেছা মার্কেটের সামনের রাস্তায় দেখা হয় রিকশা চালক তুহিন মন্ডলের সাথে। পুরো শহর ঘুরে আশানুরুপ যাত্রী না পেয়ে তিনি তার রিকশাতেই বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
কথা হয় তুহিন মন্ডলের সাথে। তিনি জানান, বাড়ি সদরের শুকতারা এলাকায়। এক ছেলে, মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে পরিবার। ছেলেটি স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতূর্থ শ্রেনেীতে আমে মেয়ে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ে।
তিনি বলেন, এতোদিন তো করোনাকে ভয় করে বাড়িতেই ছিলাম। কিন্তু সন্তানদের উপোস রাখার চেয়ে করোনায় মরা, অনেকটা ভালো। কিন্তু এসেও তো এপর্যন্ত ৫০টাকা ভাড়া মারতে পারলাম না।
গত একমাস ধরে রিকশা চালিয়ে দুই বেলা খাবারের টাকাও জোগার করতে পারছি না। আগে যেখানে দিনে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পাওয়া যেত এবং দিন শেষে খরচ বাদে তাও ৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় থাকতো সেখানে এখন দিনে ১০০ টাকা আয় করাও সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া রিকশা চালানো কঠোর পরিশ্রমের কাজ। কিছুক্ষণ পরপর আমাদের কিছু খেতে হয়। এখন সে উপায়ও নেই। কারণ টাকা থাকলেও দোকান খোলা থাকে না।
ভেবে ছিলাম ভাড়া মেরে চাল আর মাছ কিনে নিয়ে যাবো। কতোদিন হলো মাছ-গোস্ত মুখে তুলে দিতে পারিনি সন্তানদের। কিন্তু তা হয়তো আজ সম্ভব হলো না। কিভাবে সন্তানদের বলবো,‘ আমি খালি হাতে এসেছি’।
করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুধু তুহিন মন্ডলই নয়, শহরের প্রায় ২০হাজার রিকশা চালকের জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ দুর্দিন। অধিকাংশ রিকশা গ্যারেজ রাস্তার পাশে তালাবদ্ধ হয়ে আছে। যারা করোনার সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে পথে নামছেন তারাও আশানুরূপ যাত্রী পাচ্ছেন না। কারণ চলমান লকডাউনে প্রায় সবাই ঘরের মধ্যে থাকার চেষ্টা করছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না।
বগুড়া পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নগরীতে নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা ৬ হাজার ২০০টি। তবে প্রকৃত অর্থে নগরীতে চলাচল করে ২০হাজারের বেশি রিকশা। ফলে শুধু ২০হাজার চালক নন, এর সঙ্গে যুক্ত ২০হাজার পরিবার। তারাও পড়েছেন মহা সংকটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহর এবং শহরতলীতে বেশ কিছু বেসরকারি সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন, পুলিশ ও সরকারি -বেরসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নানাভাবে তৈরি খাবার এবং চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন। তবে ত্রাণের তুলনায় দরিদ্র মানুষের আধিক্য থাকায় সবার ভাগ্যে সহায়তা জুটছে না। চলমান পরিস্থিতিতে কিছু চাল-ডাল সাহায্যের আশায় পথ চেয়ে আছেন ৩০ হাজারের বেশি রিকশা চালক।
কর্মহীন এই রিকশা চালকদের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ত্রাণ সহায়তা পেলেও ৯০ শতাংশ রিকশা চালকের ভাগ্যে জুটছে না কোনো সহায়তা।