নওগাঁ প্রতিনিধি:
করোনা ভাইরাসে বিপাকে পড়েছে নওগাঁর খামারিরা। দিন যতই যাচ্ছে ততই যেন খামারিদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। একদিকে গো-খাদ্য না পাওয়া, অপরদিকে খাদ্যের দাম বেশি। এ দুইয়ে মিলে ছোট-বড় খামারিরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন। এই সংকটের কারণে বাজারে মাংসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় ১ হাজার ৬৩৮টি গাভীর খামার রয়েছে। হৃষ্টপুষ্ট খামার রয়েছে ৭ হাজার ৬১টি, মহিষের খামার ৪২টি, ছাগলের খামার ১ হাজার ৫১৩টি এবং ভেড়ার খামার রয়েছে ৫৮৭টি।
জেলার অধিকাংশ খামারিরা ঋণ নিয়ে খামার করে থাকেন। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই বেকার। এসব খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া মোটা-তাজাকরণ করে নির্দিষ্ট সময় পর তা বাজারজাত করে। ৫/৬ মাস লালন পালন করার কুরবানির বাজারে বিক্রি করা হয়। আর এ লাভের একটি অংশ চলে যায় ঋণ পরিশোধে। দেশের সিংহভাগ মাংসের চাহিদা পূরণ হয় ছোট-বড় খামারে গবাদিপশু থেকে। এছাড়াও মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী খামারিরা লোকসানের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন। পূর্বে বাচ্চাগুলো বিক্রি হতো ৪০-৫০টাকা করে। এখন সেই বাচ্চাগুলো বর্তমানে ৬-১০টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে না। এজন্য খামারিরা বর্তমানে বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। অনেক খামারি খাবারের সংকটের কারণে পোল্ট্রি খামার বন্ধ রেখেছে।
অপরদিকে, দোকানপাট বন্ধ থাকায় খামারিরা গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। যেটুকু খাবার পাওয়া যাচ্ছে তার দামও দ্বিগুনের চেয়েও অনেক বেশি। যার কারণে ছোট পুঁজির খামারিরা পথে বসতে শুরু করেছেন। লোকসানের মুখে খামারিরা তাদের খামারে উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তাহলে দেশে মাংসের কৃত্রিম সংকট দেখা দিবে। কৃষি খাতে সরকার যে প্রণোদনা ঘোষনা করেছেন তা মাঠ পর্যায়ে তালিকা করে দ্রুত কৃষক ও খামারিদের মাঝে পৌছানোর দাবী জানানো হয়েছে। এছাড়াও নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে গো-খাদ্য ও ফিডসহ অন্যান্য খাবার সামগ্রীগুলোর মূল্য কমিয়ে বাজারজাত করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন খামারিরা।
নওগাঁ সদর উপজেলার লখাইজানী গ্রামের মেসার্স সখিনা ডেইরী ফার্ম এর প্রোপাইটর আব্দুস সালাম বলেন, কুরবানি উপলক্ষে প্রতি বছর গরু মোটাতাজাকরণ করে বিক্রি করা হয়। এবার খামারে ৭টি ষাঁড় লালন পালন করা হচ্ছে। করোনার আগে ছিল গো-খাদ্য খুদ ৫০ কেজির বস্তা ৮৫০ টাকা, ব্যান্ড ৫৬ কেজির বস্তা ৯৫০ টাকা, ভুট্টা প্রতিকেজি ১৫/১৬ টাক, গম ২৪ টাকা। বতর্মানে এক মাসের ব্যবধানে খুদ ৫০ কেজির ১ হাজার ৫শ টাকা, ব্যান্ড (ফিড) ১৪০০-১৬০০ টাকা, ভ্ট্টুা প্রতিকেজি ২৭/২৮ টাকা এবং গম প্রতিকেজি ২৬ টাকা দাম। বাজারে যেটুকু গোখাদ্য পাওয়া যাচ্ছে দাম বেশি।
তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আমার মতো ছোট খামারিরা পথে বসার উপক্রম হবে। সরকার কৃষিতে যে প্রণোদনা দিয়েছেন দ্রুত খামারি ও কৃষকদের দেয়ার ব্যবস্থা করা হলে খামারিরা উপকৃত হবেন। করোনা ভাইরাসের কারণে আগামী কুরবানি ঈদে খামারিদের ভাগ্যে কি আছে আল্লাহ ভাল জানেন।
নওগাঁ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোঃ হেলাল উদ্দিন খান বলেন, ব্যবসায়ীদের কিছুটা সিন্ডিগেট আছে তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। ইতোমধ্যে আমরা বাজার মনিটরিং করেছি। আগামীতে বাজার মনিটরিংয়ে আরো কঠিন হবে।
তিনি বলেন, কৃষিতে যে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে তার দিক নির্দেশনা এখনো আমরা পাইনি। সম্ভবত ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্থ খামারিদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। ব্যাংক যদি চাই আমরা তালিকা সরবরাহ করবো।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, মাঠ পর্যায়ে ছোট-বড় খামারিদের তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। প্রণোদনার বরাদ্দ এলেই তা খামারিদের মাঝে বিতরণ করা হবে।