সুমন সরদার, নিজস্ব প্রতিবেদক:
আর কদিন পরেই ঈদ। প্রতি বছরের মত আনন্দ নিয়ে প্রিয়জনের জন্য কেনাকাটার মহোৎসবে মেতে না উঠলেও থেমে নেই মার্কেটে যাওয়া। কিংবা হাত রাঙানো মেহেদি কেনার জন্য হলেও কসমেটিকস দোকানে উকিবুকি দিতেই হচ্ছে। শুধু কি তাই মার্কেটের পাশাপাশি বাকি কাজ গুলো সেরে নিচ্ছেন অনেকেই।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কাজি নজরুল ইসলাম সড়ক, তিনমাথা সড়ক, গোহাইল সড়ক, শেরপুর সড়কসহ কোথাও একহাত পরিমান ফাঁকা জায়গা নেই। শহরের কোথাও সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। না মানছে স্বাস্থ্যবিধি, না মানছে সরকারি বিধিনিষেধ। হুমড়ি খেয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। লক ডাউন বহাল থাকলেও কার্যত তেমন কোন ভুমিকা নেই জেলা প্রসাশনের। হোম কোয়ারান্টাইনে কে আছে কারা আছে এমন পর্যবেক্ষনেও পুলিশও ঢিলেঢালা।
তথ্য অফিস থেকে মাঝে মধ্য প্রচারনা চালালেও গায়ে মাখছেনা অনেকেই। বেশির ভাগ লোকজন নানা অজুহাত নিয়ে, কিংবা পেট চলার দোহাই দিয়ে বেরিয়ে পড়ছে। সীমিত আকারে দোকান পাট, মার্কেট খোলার পরপরই চিরচেনা
বগুড়া শহরের চিত্র পাল্টে গেছে দুচারদিনের ব্যাবধানে। কদিন আগেও শহরে প্রবেশ করতে গেলে নানা বাঁধা নিষেধ ছিল। এখন যে কেউ আসছে-যাচ্ছে কোন বাঁধার সমুক্ষিন হতে হয়না। লোকজনের সাথে পাল্লা দিয়ে নামছে শহরে দাপিয়ে বেড়ানো রিক্সা, অটোরিক্সা, সিএনজি, বাইক আর প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস সহ নানা ধরনের যানবাহন। যার ফলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরে লেগেই থাকছে যানজট।
একদিকে করোনার ভয় অন্যদিকে মাহে রমজান, যার ফলে ট্রাফিক পুলিশ মোড়ে মোড়ে ডিউটি পালন করলেও প্রচন্ড গরমে গলদঘর্ম অবস্থায় তাদের নাকানি চুবানি খেতে হচ্ছে।
অনেক ব্যবসায়ী সরকরী নির্দেশনা না মেনেই অন্যান্য ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। শহরে এমন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নাই যে সেটি বন্ধ আছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ দিন দিন আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও গবেষকরা বলছে নিরাপদ সামাজিক দূরত্বের বিকল্ল নেই। সবচে বেশি ভাল নিজ বাড়িতে থাকা।
অথচ বগুড়ার চিত্র উল্টো যেন করোনা কোন বিষয় নয়। করোনা নিয়ে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন সকাল- রাত পর্যন্ত লেখালেখি চলে। মন্তব্য করেন অনেকেই ঈদের কেনাকাটা নিয়ে। সরকার এত সতর্কবার্তা জারি করে কি লাভ হলো। এত ত্রান দিয়ে কি হলো। মাঝখানে পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিকরা মরছে আর আক্রান্ত হচ্ছে।
গাবতলী থেকে আসা নিয়াজ মিয়া জানালেন তার নাতির জন্য কাপড় নিতে এসেছে। জিবনের ঝুঁকি তো আছেই। কি করবেন ভাই, আমাদের মত গরীবের অল্প কেনাকাটা। মার্কেট খোলা না থাকলে আসতাম না।
একই কথা জানালেন, কলেজ পড়ুয়া সেলিনা। আবেগ দিয়ে বিবেক চলেনা, আর কত ঘড়ে থাকব। যা হবার হবে। আপনি কি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারেন ঘড়ে থাকলেই নিরাপদ। সরকার খুলে দিল কেন, আর কদিন পরে দিলেই পারত। আমার প্রয়োজনে বেরিয়েছি।
ইজি বাইক চালক রানা বললেন, আর পেট চলেনা ভাই। ভাড়া ভালোই হচ্ছে। যা হবার হবে অত ভেবে চলতে পারব না।
এদিকে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা হলেও এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ। অন্যদিকে ফুটপাত আগের আদলেই দখল। নবাববাড়ি সড়কে কাঁচা বাজার থাকায়, অন্য সড়কগুলিতে চাপ বাড়ছেই।
বগুড়া ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের এডমিন রফিকুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত যানজট বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দুপুরের পরে তেমন চাপ নেই। প্রতিটা মোড়ে আমাদের সদস্য আছে। সার্জেন্ট এবং টি.আই রা মাঠে কাজ করছে। আগে থেকেই এ বিভাগে সদস্য সংখ্যা কম রয়েছে। যার ফলে অনেক পয়েন্টে পুলিশ দিতে পারিনা। আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। দীর্ঘ বন্ধের পরে যানজট একটু হচ্ছে। চাপ সামলাতে মনিটরিংকরা হচ্ছে।
বগুড়ায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সচেতনতা নেই সাধারনের মধ্যে। তবে অনেকেই ধারনা করছেন, বগুড়ার পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারে।