একে আজাদ
মহামারী করোনাভাইরাস নিয়ে সারা দুনিয়ার মতো বগুড়ার মানুষও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। অনেকে শঙ্কা নিয়ে বিশেষ প্রয়োজনে বের হচ্ছেন ঘর থেকে। তবে শহরের সড়কে বের হলেই আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কঠোর জেরার মুখে পড়ছেন তারা। পুলিশ আর প্রশাসন এখনো সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করে যাচ্ছেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে। করোনা ঠেকাতে শহরের প্রবেশমুখগুলোতেও ব্যাপক কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। যানবাহনের ক্ষেত্রেও বেড়েছে কড়াকড়ি।
সকাল থেকেই পুলিশ শহরের সাতমাথায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। পার্করোড, ঘোড়াপট্টি সড়ক ও সেউজগাড়ি পানির ট্যাংকির সড়ক, স্টেশন সড়ক, কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, চেলোপাড়া, মাটিডাল, কারমাইকেল সড়কে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনীয় যানবাহনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কাঁচাবাজার, ওষুধ ছাড়া প্রায় শহরের বেশিরভাগ দোকানপাটও বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছু যানবাহন নিয়ন্তণের জন্য শহরের কয়েকটি স্থানে ট্রাফিক পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। এই বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সেনাবাহিনী। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালমান রয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পুলিশ বলছে, গত এক সপ্তাহের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনেক মানুষ প্রয়োজন ছাড়াই শহরের ঘোরাফেরা করছেন। হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে রাস্তায় অন্যদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। এসবে করোনাভাইরাস বিস্তার লাভের সুযোগ হচ্ছে। এ কারণে অপ্রয়োজনীয় প্রবেশ ঠেকাতে গতকাল সকাল থেকে শহরের প্রাণ কেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থান নেন জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা। তিনি মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন। এই বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে পরিবার বাঁচবে। দেশ বাঁচতে। মহামারী থেকে আমরা রক্ষা পাব।
সাতমাথায় থেকে শুরু করে পুলিশ সুপার শহরের গালাপট্টি সড়ক, কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, নওয়াব বাড়ি সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে সতেচতনামূলক প্রচার চালান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) আবদুল জলিল ও মোকবুল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম বদিউজ্জামান, সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রেজাউল করিম, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ আছলাম আলীসহ আরও অনেকে।
গতকাল শহর ঘুরে দেখা গেছে, বগুড়া শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সড়কে মানুষের চলাচলে কড়াকাড়ি আরোপ করা হয়েছে। সকাল থেকে জেলার প্রবেশমুখে বনানী, তিনমাথা, চারমাথা, মাটিডালি বিমানমোর গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশ শহর থেকে প্রয়োজন ছাড়া কাউকে শহরে ঢুকতে দিচ্ছে না।
গতকাল দুপুরে শহরে ঢোকার পথে বনানী এলাকায় সেনাবাহিনীর কড়াকড়ির মুখে পড়ের শাজাহানপুর উপজেলার গণ্ডগ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। তিনি শহরে যাচ্ছিলেন ফ্যান কেনার জন্য। পরে সেনাসদস্যরা তাকে বুঝিয়ে বলেন, শহরের সব দোকানপাট বন্ধ। এখন জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়া কোনো দোকান খোলা নেই। পরে তিনি চলে যান বাড়িতে।
শহরের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে মফিজপাগলার মোড়, চোলোপাড়া ব্রীজ এলাকায়ও। বসানো হয়েছে ব্যারিকেড। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বানিহীর সদস্যরা সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, মহামারী থেকে রক্ষা পেতে ঘরে থাকার কোনো বিকল্প নেই। তবে এর মধ্যে অনেকে অবুঝের মতো আচরণ করছেন।
গতকাল সকালে চেলোপাড়া ব্রীজে এমন একটি ঘটনা ঘটে। সকালে সাবগ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম বের হয়েছেন তার পরিবারের প্রসাধনী কেনার জন্য। পুলিশ তাকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, শহরের সব দোকান বন্ধ। তবুও তিনি যেতে চান শহরে। পরে তাকে বুঝিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠান এক পুলিশ সদস্য।
জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, সাধারণ মানুষকে সতেচন করা না গেলে করোনাভাইরাসের খুব দ্রুত মহামারী আকার ধারণ করবেঠ। এ কারণে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বগুড়া জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যেক উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে আজ থেকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেছে। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বগুড়া শহর এলাকায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হতে পারবেন না। বাড়ি থেকে কেউ বের হলে পুলিশের কড়াকড়ির মুখে পড়তে হবে। জরুরি সেবা বাদে রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
এদিকে জেলায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফয়েজ আহাম্মদ। ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সকল প্রকারের দোকানপাট (কিছু ব্যতিক্রম ব্যতিত) পরবর্তি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র সার, বীজ, কীটনাশক, কাঁচা বাজার, মুদি দোকান এবং কৃষি যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে সকাল ছয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বিকেল পাঁচটার পর শুধুমাত্র ওষুধের দাকান আর ডাক্তারি চেম্বার ছাড়া অন্য কোনো কিছু কোনোভাবে খোলা যাবেনা। শুধুমাত্র সরকারি জরুরি সেবাসমূহ এই ঘোষণার বর্হিভূত থাকবে। এই নিদের্শনা কেউ অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।