একে আজাদ
করোনায় ভাইরাসে বিপর্যস্ত বিশ্ব। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার সাধারণ ছুটি আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে। বন্ধ রয়েছে দেশের ছোট-বড় হাট-বাজার-মোকামসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবসা খুঁজছেন বগুড়ার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীয়া বলছেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে অন্য কিছু করা ছাড়া উপায় থাকবে না। করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তারও কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। তবে অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, করোনার অজানা ভয়াবহতা কোন দিকে যাচ্ছে তার ঠিক নেই। অবস্থা স্বাভাবিক না হলে ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। বিপল্প উপায়ে আয় ছাড়া তাদের আর কোনো গতি থাকবে না।
শহরের রাজা বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৫ তারিখে আমার দোকানের সব মুরগী বিক্রি শেষ। নতুন করে মুরগি তোলা যাচ্ছে না। প্রথমত মুরগির চালান বন্ধ। দ্বিতীয়ত এই সময় ক্রেতাও নেই।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, খুব সহসাই মুরগীর ব্যবসা স্বাভাবিক নাও হতে পারে। এখন মুরগীর বাজার মন্দা যাচ্ছে। তবে সাধারণ ছুটি এবং রমজান মাসকে সামনে রেখে রেখে আগামীতে মুরগীর দাম বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু ততোদিন আমাদের অবস্থা বেগতিক হবে। অনেকে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েও যেতে পারেন।
নিউমার্কেট এলাকার মুদি দোকানদার কোরবান আলী বলেন, করোনা আতঙ্কে গত সপ্তাহের প্রথম দিকে মানুষ প্রচুর কেনাকাটা করেন। এই সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনে মানুষ মজুত করেছেন। সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর শহর থেকে অনেকেই গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। ফলে বর্তমানে বিক্রি কম। তারচেয়ে বড় কথা কোম্পানিগুলো থেকে মালামালগুলোও এখন ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। দোকানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যও এখন নেই। এই অবস্থায় ব্যবসা চালু রাখাও কষ্টসাধ্য।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ ছুটি চলাকালীন দোকান হয়তো পুরোপুরি চালু রাখা যাবে না। কারণ যে মালামাল আছে তা দিয়ে দোকান চলবে না।
গালাপট্টি এলাকার ফল ব্যবসায়ী আমিরুল হক বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসাও শেষ হবে তেমনি না খেয়ে মরতেও হবে পরিবার নিয়ে। ফলের ব্যবসা বাদ দিয়ে বিকল্প কিছু করা যায় কিনা ভাবছেন তিনি।
বকশিবাজারের সবজি বিক্রেতা নুর হোসেন বলেন, করোনা যেভাবে প্রভাব ফেলেছে এতে কবে নাগাদ দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি হবে বলা মুশকিল। কয়দিন আর ব্যবসা বন্ধ করে টিকে থাকা যায়! বিকল্প কিছু একটা করতেই হবে। এজন্য সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া বন্দরের মুদি দোকানি মুনছুর আলী বলেন, সাধারণ ছুটির সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান চালু রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে আসছেন না। তাই বিভিন্ন দরকারি পণ্য দোকানে নেই। এই অবস্থায় কবে নাগাদ আবার ব্যবসা সচল হবে এ নিয়ে আমরা দ্বিধায় আছি।
দেকান খুললেই লোক সমাগম বেড়ে যায় বলেও প্রশাসন মৌখিকভাবে দোকান-পাট বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন। শুধু মাত্র ওষুধের দোকান খোলা রাখতে পারছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বহুদিন পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীকে সামনে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে যারা দোকান এবং দৈনন্দিন আয়ের ব্যবসার সাথে জড়িত, তারা সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন বেশি।
বগুড়া রাজাবাজার দোকান ও আরৎদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, দেশের মানুষের কথা বিবেচনা করে এবং সরকারের নিদের্শনা ক্ষুদ্র-মাঝারিসহ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে সাময়িক ক্ষতি হচ্ছে এটা সত্য। তবে এই মহুর্তে আর কী করার আছে আমাদের? অনেকেই বিকল্প পথ খুঁজছেন। আপাতত বিকল্প কিছু ভাবা যেতে পারে, কিন্তু এই মুহুর্তে কিছু করে উঠাও করা সম্ভব না। আর সবাই তো এতোদিনের ব্যবসা পরিবর্তনও করতে পারবেন না। এই সংকটে ব্যবসায়ীদের ধৈর্য ছাড়া কোনো পথ নেই।
এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হারুন অর রশিদের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চাহিদা ও যোগান এই দুটো সার্কেলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সাময়িকভাবে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের সমস্যা সৃষ্টি হবে। তবে এতে মাঝারি ব্যবসায়ীরা বিপদটা কাটিয়ে উঠতে পারবে। কিন্তু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর যে সাহায্য সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছে এতে এই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে।