নিজস্ব প্রতিবেদক
বয়স ষাটোর্ধ রমিছা বেওয়া। বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাকপালা এলাকায়। এক যুগ আগেই দিনমজুর স্বামী মারা যান। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সে ঢাকায় স্বামীর সাথে থাকেন। সেখানে মেয়ে এবং মেয়ের জামাই দুজনই পোষাক কারখানায় কাজ করে তাদের সংসার চালায়। কিন্তু বৃদ্ধা রমছিা বেওয়ার একমাত্র অবলম্বনভিক্ষা ভিত্তি। তা করেই তার সংসার চলতো। বাড়ি বেড় না হলে তার আহারই জোটেনা।
কিন্তু কয়েকদিন আগে করোনার সংক্রমন রোধে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেড় না হওয়া নির্দেশ দেয় সরকার। এরপর থেকে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল রমিছা বেওয়ার মাথায়। ঘরে যতসামন্য চাল ছিল, গেল কয়েকদিনে তা শেষ হয়ে গেছে। জমানো টাকাও নেই যে চাল কিনে আনবেন। আবার মানুষের কাছে হাত পাতবেন, সেই সুযোগও নেই।
গতকাল সোমবার সকালে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসন ছান্নু তার হাতে এক ব্যাগ খাবার সামগ্রী তুলে দেন। যা দিয়ে এক সপ্তাহ চলে যাবে। ব্যাগে ছিল ৮ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ৩ কেজি আলু, তেল আধা লিটার, লবন, সাবান, মাস্ক এবং জিবানুনাশক স্যানিটাইজ।
সান্নুর দেয়া খাবার সামগ্রী কাঁধে করে নিতে কষ্ট হলেও চোহারায় আনন্দের ছাপ ছিল। কথা হয় রমিছা বেওয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, ‘কি যে বলব বাবা, বলার ভাষা আমি হারিয়ে ফেলেছি। জিবনে এতবার ভোট দিলাম, কিন্তু আমার পাশে কেউ দাড়ায়নি। আমি ভাবতাম যোগ্য জনপ্রতিনিধি চিনতে পারি নাই। তবে আজ বুঝতে পারছি এই মানুষটিকে ভোট দিয়ে ভুল করিনি।
শুধু রমিছা বেওয়াকেই নয় ছান্নু নিজ অর্থায়নে গেল দুই দিনে কর্মহীন ৫’শ ব্যক্তিকে নিজস্ব অর্থায়নে খাবার ব্যাগ হাতে তুলে দেন। তাও আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে। তার দেয়া খাবার অনায়শে ৭দিন করে চলবে প্রতিটি পরিবারের। পাশাপাশি মাস্ক এবং স্যানিটাইজ বিতরন করেছেন তিনি।
এসময় তার সঙ্গে ছিলেন উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক বাদশা আলগীরসহ স্থানীয় নেতাকর্মী।
পুরো উপজেলাবাসিকে নিরাপদে রাখতে কৃষকদেও একত্রিত করে তাদের মাধ্যমে জিবানুনাশক স্প্রে কার্যক্রম শুরু করেছেন গ্রামে গ্রামে।
এনিয়ে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু বলেন, করোনা ভাইরাস এর সংক্রামনকে একটি বৈশি^ক প্রাদুর্ভাব হিসেবে ঘোষনা করেছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মীসহ বিত্তবান ব্যক্তি নিজ এলাকার জনগণের পাশে থাকার আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব অর্থায়নে করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য এবং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গত শনিবার থেকে এপর্যন্ত উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের কর্মহীন মানুষের মাঝে সবান, মাস্ক ও জীবাণুনাশক বিতরণ করেছি। এই কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আরও বলেন, করোন ভাইরাসে আতংকিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা নিজেরা সর্তক থাকলেই এ ভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারবে না।