
আজ থেকে ১৭ বছর আগের কথা। তখন ২০০৩ সাল। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। পাশাপাশি সাপ্তাহিক আজকের শেরপুর পত্রিকায় সাংবাদিকতা করি।
আগের দিন ১২ মে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছি। বিকালে উপজেলা পরিষদের দিকে যেতেই (বর্তমান হাবলু চত্বর) তৎকালীন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনোহার রহমান হাবলু ভাই আমাকে ডেকে বললেন, নাহিদ আগামীকাল বিকালে প্রোগ্রাম আছে, সুঘাটে। যেতে হবে কিন্তু। আমি বললাম, অবশ্যই যাব। তিনি বললেন, তোমাকে সাথে নিয়ে যাব।
১৩ মে ২০০৩ বিকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সবাই একত্রিত হয়ে রওনা দেয়। শহর ছাত্রলীগ নেতা রুবেলের মোটরসাইকেলে ওঠেন হাবলু ভাই। সঙ্গে আমাকে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু রতন কর্মকতার ভাইকে নেন। পরে আমাকে নেবার জন্য ছাত্রলীগ নেতা তাজুল ইসলাম তাজু ভাইকে মোটরসাইকেল দিয়ে পাঠিয়েদেন। সঙ্গে ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজার রহমান ভুট্টো ভাই।
আমাদের সাপ্তাহিক আজকের শেরপুর পত্রিকার অফিসের সামনে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। তাজু ভাই আসলে তাজু ভাই, ভুট্টোভাই আর আমি এক মোটরসাইকেলে চড়ে রওনা হলাম সুঘাটের উদ্দেশ্যে।
ছোনকা বাজার পার হবার পর আমরা গিয়ে মহাসড়কের পশ্চিমপার্শ্বে দাঁড়িয়েছি মাত্র। হাবলু ভাইয়ের মোটর সাইকেল রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে থেকে পুর্ব দিকে পার হচ্ছিল। দেখতে দেখতে বগুড়ামুখী হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি কোচ চাপা দিলে হাবলু ভাইয়ের মোটর সাইকেলটিকে। নেতাকর্মীরা সবাই মিলে হাবলু ভাই ও রুবেলকে রক্তমাখা অবস্থায় উদ্ধার করে শেরপুরের দিকে চলে আসা হলো। হাবলুভাই ও রুবেলকে দ্রুত বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে পাঠানো হলো। এর কিছুক্ষণ পরই খবর পাওয়া গেলো তারা আর বেঁচে নেই। চোখের সামনে এমন অকাল মৃত্যু মেনে দিতে পারছিলাম না। পরদিন শেরপুর ডিগ্রী কলেজ মাঠে ছাত্রলীগ নেতা হাবলু ভাই ও রুবেলের নামাজে জানাযায় অশ্রুসিক্ত হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়।
‘বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ’যে কতটা ভারী সেদিন কিছুটা অনুভব করেছিলাম। তৎকালীন বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মজিবর রহমান মজনুর ছেলে, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনোয়ার রহমান হাবলু ভাই ও শহরছাত্রলীগ নেতা ফজলুল বারী রুবেলের অকাল মৃত্যুতে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় আওয়ামী রাজনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়। বিএনপি-জামাতের দু:সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য যোগ্য পিতার যোগ্য উত্তরসূরীর মতই তিনি সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন সম্ভাবনার ভবিষ্যত রচনার জন্য। তার সঙ্গে ছিলেন হাবলু ভাইয়ের বিশ্বস্ত একদল কর্মী। সেসময়ে দলের প্রয়োজনে সংবাদকর্মী হিসাবে আমিও যেটুকু পেরেছি কাজ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেদিনের সড়ক দুর্ঘটনার দু:স্বপ্নের স্মৃতি আজো ভুলতে পারিনি। আরো মনে পড়ে, সেদিনের দুর্ঘটনার পরপরই আমার ডিজিটাল ক্যামেরায় কয়েকটি ছবি ধারণ করা ছিলো।
দুপুরে হরতাল চলাকালে বাসষ্ট্যান্ডে বাটার মোড়ের সামনে ক্যামেরা দিয়ে হাবলু ভাইয়ের বক্তৃতায় ছবি তুলেছিলেন আমার বাবা সাইফুল বারী ডাবলু। যেগুলো ছিলো ভাইয়ের জীবনের শেষ ছবি।
আজ ১৩ই মে তাদের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।