আমিন ইসলাম:
বগুড়ায় মার্কেট খোলার প্রথম দিনই সব বয়সী মানুষ ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেটগুলোতে ভিড় করছেন। করোনার ভয় উপেক্ষা করে সকাল ১০টার আগেই মার্কেটমুখী সড়কগুলোতে মানুষের ঢল নামতে শুরু করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারিভাবে কেনা-কাটার পরিসরকে সীমিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনো মার্কেটেই ক্রেতা বা বিক্রেতারা তা মানছেন না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শহরের বিভিন্ন সড়কে এবং মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিতে দেখা গেলেও জনতার চাপে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
শুধু তৈরি পোশাক কিংবা জুতা-স্যান্ডেলের দোকানই নয় শহরে রড-সিমেন্টসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সব দোকানই খুলেছে। তবে অন্যান্য দোকানের তুলনায় ঈদের কেনাকাটার জন্য শহরের সবচেয়ে বড় বিপণি বিতান ‘নিউ মার্কেট’-এ মানুষের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে বেচা-কেনার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা শারীরিক দূরত্বও কেউ রাখছেন না। পছন্দের পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল ও কসমেটিকসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য ক্রেতাদেরকে একেবারে গা ঘেঁষাঘেঁষি, এমনকি ঠেলাঠেলিও করতে দেখা গেছে।
অনেককে তাদের শিশু সন্তানদের নিয়েও কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। নিউ মার্কেটের হাতে গোনা কয়েকটি বড় দোকানে বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পড়তে দেখা গেলেও ছোট-খাট দোকানগুলোতে বিক্রেতারা ন্যুনতম কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
নিউ মার্কেটে সন্তানকে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা ফুলবাড়ি এলাকার নাদিয়া সুলতানা জানান, তিনি তার ১০ বছর বয়সী ছেলের জন্য জুতা আর নিজের জন্য একটি থ্রিপিস কিনতে এসেছেন। নিজে মাস্ক পড়লেও ছেলের মুখে কোন মাস্ক ছিল না। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কেনাকাটার কারণ জানতে চাইলে ওই গৃহবধু কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলেন, ‘করোনা নিয়ে আর ভয় দেখাবেন না। যা হবার হবে। এখন একটু কেনা-কাটা করতে দিন।’ তার কথায় দোকানিও সায় দিয়ে বলেন, ‘দেড় মাস পর দোকান খুলেছি। একটু বেচা-কেনা করতে দেন। ভাগ্যে করোনায় মৃত্যু লেখা থাকলে কেউ তা ঠেকাতে পারবে না।’
এদিকে মার্কেটগুলোতে মানুষের উপড়েপড়া ভিড়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন। তিনি বলেন, দোকান-পাট ও মার্কেট খোলা হলে সেখানে মানুষ ভিড় করবে বলেই আমরা আশঙ্কা করেছিলাম। যেহেতু আমরা সচেতন নই তাই কোন কিছু দিয়েই মানুষের ভিড় ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
বগুড়া পুলিশের মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনতান চক্রবর্তী জানান, সরকারিভাবেই প্রত্যেককে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বলা হয়েছে। এটা হলো ব্যক্তি সচেতনতার বিষয়। কেউ যদি না মানে তাহলে তাকে জোর করে মানানো খুব কঠিন। তিনি বলেন, ‘বিকেল ৪টার পর যাতে কোন দোকান খোলা না থাকে সে বিষয়টি আমরা খুব কঠোরভাবে দেখবো।’
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ৯ মে পর্যন্ত বগুড়ায় মোট ৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জন সুস্থ হয়েছেন। এছাড়া ৬ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও তারা কেউ কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিলেন না/