একে আজাদ:
টগবগে তরুন ‘সাগর’। বয়স ১৬ হবে। বগুড়া সদর উপজেলার লাহেরি পাড়া ইউনিয়নের কমরপুর গ্রামের বাসিন্দা সে। সংসারে শুধু এক মা আছেন। নাম সাহিদা বেওয়া (৫০)।
বাবা দিনমজুর আফসার আলি ৩বছর আগে মারা গেছেন তিনি। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। তারা স্বামীর সাথে ঢাকায় গার্মেন্সে কাজ করেন।
মা সাহিদা বেওয়ার খাবারের, চিকিৎসার কোন অভাব বুঝতে দেননি সাগর। প্রতিদিন ৪০০টাকা রোজগার করত। তা দিয়েই চলে যেত সংসার।
শাজাহানপুর উপজেলার মহাসড়কের পাশে ‘জব্বার হোটেল এন্ড রেস্তারায়’ কাজ করতেন। তিনবেলা খাবার আর ৪০০টাকা দৈনিক হাজিরা হিসেবে পেতো।
বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে যেত। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় হোটলটি।
সেই সাথে কর্মহীন হয়ে পরে সাগর।
আড়াই মাস বসে রয়েছে। জমানো যা টাকা ছিল সব শেষ সাগেরর।
ঘরে এক মুঠ চাল পর্যন্ত নেই। তারপরও মা সাহিদা বেওয়া তার সন্তানকে বাড়ির বাহিরে যেতে দেননা। তাকে চোঁখে চোঁখে রাখেন। যেন বাহিরে গিয়ে সন্তান বিপদে না পড়েন। তিনি শুনেছেন করোনার নাকি ওষুধ নাই। তাই তিনি না খেয়ে কষ্ট করবেন, তারপরও সন্তানকে চোখের আড়াল হতে দিবেন না।
এদিকে মায়ের পেটে খাবার নেই। সন্তান কি বসে থাকতে পারে?
শনিবার সকালে মায়ের ঘুম ভাঙ্গার আগেই বাড়ি থেকে বের হয় সাগর। শহরে এসে দেখা করে তার এক সহকার্মীর সাথে। সেই সহকর্মীও তার কাজের সন্ধান দিতে পারলোনা।
শহরের গালাপট্টি মোড়ে দেখা হয় সাগরের সাথে। তার দিকে তাকানো মাত্রই যে কেউ বুজতে পারবেন কতটা অসাহাত্ব নিয়ে হাটছিল।
সাগর এসময় তার করুন কথা গুলো শোনায়।
আর বলে আমকে তো কেউ সহায়তা করেনা।
আমি কাজ করে মায়ের জন্য খাবার নিয়ে যাবো। শুনেছি শহরে লাচ্চা তৈরি হচ্ছে। শ্রমিক হিসেবে যদি কাজ মেলে, তাই শহরে এসেছি। যদি মায়ের মুখে খাবর তুলে দিতে না পারি তাহলে তো বেঁচে থাকাটাই বৃথা।
সাগর আরো বলে, আমাদের খোঁজ কেউ রাখেনা। সরকার থেকে শুনে একটা খবর জনাবেন, কবে করোনা বিদায় নিবে। কবে থেকে কাজ করতে পারবো।
এই বলে মাথা নিচুঁ করে বিষণ্ণতার ছাপ নিয়ে আবারও হাটঁতে শুরু করলো সাগর।