একে আজাদ:
কিশোর গ্যাংয়ের হাতে নির্যাতিত হয়ে গ্রামবাসির থানায় অভিযোগের তিনদিন অতিবাহিত হলেও মামলা হিসবে রেকর্ড ভুক্ত করেননি ওসি।
এদিকে গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের আটক করছেনা পুলিশ। ফলে আতংকে দিনকাটছে পুরো গ্রামজুড়ে।
ঘটনাটি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামে।
এলকাবাসি ও হামলায় আহতদের অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের ফরিদুল ইসলামের ছেলে পায়েলের (২২) নেতৃত্বে ওই এলাকায় ১০-১২ জনের একটি কিশোর গ্যাং এর উত্থান ঘটে।
এরা ওই ইউনিয়নের রাজারামপুর, পলিপলাশ, গোবিন্দপুর, বড়নগরসহ আশপাশ এলাকায় ইভটিজিং, বিনা কারণে সাধারণ মানুষকে মারপিট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রকাশ্যেই করে আসছে।
গ্যাং প্রধান পায়েলের বাবা ফরিদুল ইসলাম আমরুল ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ফলে তার বাবার প্রভাবে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে পায়েল।
এক বছর আগে পায়েল এক স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওই ঘটনায় দুই মাস জেল খেটে বের হয়ে ওই ছাত্রীর বাবাকে মারপিট করে। তিন মাস আগে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। পরে স্থানীয়ভাবে আপোষ-মিমাংসা করা হয়। এক মাস আগে ডা. আফজাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে মাদক সেবনে নিষেধ করলে তাকে বেদম মারপিট করে এই পায়েল গ্রæপ। দুই সপ্তাহ আগে ভাড়া চাওয়ায় মানিক নামে এক সিএনজি চালককে মারপিট করে তারা। দেড় মাস আগে পায়েল বাহিনীর সাথে না থাকায় সবুজ ও শিপন নামে দুই যুবককে মারপিট করে এই গ্রুপের কিশোররা। এঘটনার প্রতিবাদ করলে শিপনের বাবা সাজেদুর রহমানকেও মারপিট করে তারা।
দুই মাস আগে তুচ্ছ ঘটনায় পায়েলের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজারামপুর মাঠপাড়া গ্রামের শহিদুল নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে বাড়ি-ঘরের দরজা, জানালা ভেঙে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এক মাস আগে পলিপালাস গ্রামে দুইপক্ষের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে সালিস বৈঠক বসলে সেখানে পায়েল গ্যাং গিয়ে মারপিট করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। খবর পেয়ে পুলিশ গেলে তারা পালিয়ে যায়।
এ ছাড়াও দুই সপ্তাহ আগে শিহাব নামের এক যুবকের মাছ ধরার জাল চুরি করে পায়েলসহ তার গ্রæপের সদস্যরা। এনিয়ে প্রতিবাদ করলে শিহাব সহ তার বৃদ্ধ বাবাকে মারপিট করে পায়েল গ্যাং।
সর্বশেষ গত সোমবার (১৭ আগষ্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কিশোর গ্যাং পায়েল গ্রুপের হাতে নির্যাতনের শিকার হন পলিপলাশ গ্রামের আব্দুল মোত্তালিব ও সাজেদুল হক নামের দুই যুবক। তার দুইজন মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে তাদের গতিরোধ করে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এসময় তাদের কাছে থাকা নগদ ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় পায়েল গ্যাং।
এঘটনায় পরের দিন মঙ্গলবার দুপুরে জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীসহ থানায় গিয়ে মোত্তালিব ও সাজেদুল পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করেন।
কিন্তু ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও মামলা হিসেবে থানায় রেকর্ড করেননি পুলিশ। এখন পর্যন্ত পায়েল গ্যাংয়ের কেউ আটকও হয়নি। বরং প্রকশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। এতে করে আতংকে দিনকাটছে পুরো গ্রামজুড়ে।
পায়েল গ্যাংয়ের হাতে নির্যাতিত সাজেদুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখনও পায়েল গ্যাংয়ের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তারা প্রকাশ্যেই গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবারও যেকোন সময় গ্রামবাসির উপর হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তা চাই।
এবিয়য়ে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুনুর রশিদ শহিদ জানান, পায়েলের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের সংঘবদ্ধ এই কিশোর গ্যাং ক্রমেই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। এদের এখনই প্রতিহত না করলে ভবিষ্যতে এরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
আমরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অটল জানান, এই বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এরা কারো কথা মানে না। এদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে না পারলে এলাকায় প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শামীম আহম্মেদ জানান, সরেজমিনে এলাকাতে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানাগেছে, পায়েল ও তার সহযোগেীরা আপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। বিষয়টি তদন্ত চলছে।
তবে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পায়েল ও তার সহযোগীরা খারাপ এটা সত্যি। তবে মামলা না হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
এবিষয়ে বগুড়ার মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তীর সাথে মূঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কেন মামলা হচ্ছেনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।