শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার শাজাহানপুরে মুক্তিযোদ্ধার সনদ জাল করে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধাসহ ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে হযরত আলী নামে এক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে।
বুধবার দুপুরে শাজাহানপুর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী বলেন, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাটাখালী গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর রহমানে সনদ জাল করে নিজের নামে সনদ তৈরী করে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা সহ ভাতা ভোগ করে আসছেন একই গ্রামের মৃত গফুর প্রামানিকের ছেলে হযরত আলী।
মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী জানান, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শহীদ হন সারিয়াকান্দি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর রহমান। মৃত্যুর পর তার পরিবারে বাবা, মা, ভাই, বোন ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। সেসময় মানবেতর জীবন যাপন করছিল পরিবারটি। পরিবারটিকে আর্থিক সাহায্য সহযোগীতার প্রলোভন দেখিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র (আতাউল গণি ওসমানী স্বাক্ষরিত) জাল করে নিজ নামে সনদ তৈরী করেন হযরত আলী। এরপর ১৯৭৩ সালে রক্ষী বাহিনীতে যোগদান করেন তিনি। পরবর্তি সময়ে রক্ষী বাহিনী বিলুপ্তীর পর কৌশলে সেনাবাহিনীর সিগনাল কোরে যোগদান করেন হযরত আলী। সেনাবাহিনীতে চাকরীরত অবস্থায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ মূলে সেনাবাহিনীর বিশেষ গেজেটে নিজেকে শাজাহানপুর বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। অথচ সারিয়াকান্দি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার স্বপক্ষে কোন সনদ ও দলিল প্রমানাদি পাওয়া যায় নাই। স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ ভারতীয় তালিকা বই নং, এফ এফ নং, সেক্টর নং, মুক্তি বার্তা নং, গেজেট নং ও ডাটা বেইজ সম্পূর্ণ ভূয়া কাগজপত্র সন্নিবেশিত করে সেনাবাহিনীর বিশেষ গেজেট মূলে বর্তমানে শাজাহানপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধারা দাবী করেন, ১৯৭৩ সালে রক্ষী বাহিনীতে যোগদান করে বেসামরিক গেজেট মূলে মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে সেনাবাহিনীর গেজেট মূলে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয় এটা বোধগম্য নয়। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অপ্রাসাঙ্গিক, মিথ্যা ও ভূয়া। এমতাবস্থায় দূর্নীতিবাজ, প্রতারক হযরত আলী সহ যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালের পরে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হয়ে সেনা গেজেট মূলে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন সেই সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে যাচাই-বাছাই এর আওতায় আনার দাবী জানান মুক্তিযোদ্ধারা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌরগোপাল গোস্বামী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, হাবিবর রহমান, আমজাদ হোসেন, বছির হোসেন, এএসএম মুসা, হরিপদ দাস, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল হালিম, ইব্রাহীম হোসেন প্রমুখ।
এবিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলীর সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।