নিজস্ব প্রতিবেদক , বগুড়ার শহরতলি বনানী বন্দর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর আলম (৩৩) নিখোঁজের একদিন পর লাশ গতকাল শনিবার সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তার বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
নিহত নুর আলমের বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলার গন্ডগ্রাম পূর্ব পাড়ায়। ওই গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে শহরের উদ্দেশে বের হন নুর আলম। তিনি তার চাচার আদা-রসুনের পাইকারি দোকেন কাজ করতেন। কিন্তু ওই রাতে আর বাড়ি ফেরেন নি। পরদিন শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে চালক নুর আলমকে অচেতন অবস্থায় তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরিবারের সদস্যরা প্রথমে মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু জ্ঞান না ফেরায় তাৎক্ষণিকভাবে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের চাচা আলম ট্রেডার্সের মালিক মো. আলম হোসেন অভিযোগ করেন, নুর আলমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবেশী তিনভাই বাবলু, মাসুদ এবং সবুজের সাথে রাস্তার জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছিল। সরকারি রাস্তার উপর প্রাচীর নির্মাণের সময় তাদের সাথে মারামারি ঘটনাও ঘটে গত ২৪ মার্চ রাতে। এ ঘটনায় সবুজ বাদী নুর আলমসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামা ১০ জনকে আসামি করে মামলা করে। ওই মামলার তালিকায় নুর আলম দুই নম্বর আসামি।
নুর আলমের চাচার দাবি, ওই শত্রুতার জেরে প্রতিবেশীরাই তাকে হত্যা করেছে। হত্যাকারীরা নুরের লাশ বাড়িতে পাঠিয়েছে। তাদের পরিকল্পনার সাথে আরো অনেকে জড়িত রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক জানান, “গতকাল ভাড়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হই সকাল ১০ টার দিকে। লতিফপুর কলোনী এলাকার এক যুবক মোফাজ্জল হোসেন তাকে বলেন, একজন ইমারজেন্সি রোগী আছে তাকে মেডিকেলে নিতে হবে। এ সময় মোফাজ্জলের আরেক ভাইসহ কয়েজন উপস্থিত ছিলেন। এরপর ওই যুবকসহ আরো দুইজন সিএনজিতে উঠে জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ডাক্তার দেখাতে ওই রোগীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তার কয়েক মিনিট পরই আবার রোগীকে স্ট্রেচারে করে ফেরত নিয়ে আসেন তারা। তখন মোফাজ্জল ওই রোগীর বাড়ি ঠিকানা দিয়ে বলেন, ‘এই ঠিকনা মতো রোগীকে বাড়ি রেখে আসবি। ডাক্তার বলেছে, তেমন কিছইু হয়নি। তবে মদ বেশি খাওয়ায় জ্ঞান হারিয়েছে। বাড়িতে গিয়ে ঘুম পারলে সবঠিক হয়ে যাবে।’ আমি তার কথামতো গন্ডগ্রাম পূর্বপাড়ায় নিয়ে আসি। তবে ওই রোগী প্রথম থেকেই অচেতন অবস্থায় ছিলেন।”
অভিযুক্ত গন্ডগ্রাম পূর্বপাড়া এলাকার বাবলু মিয়া এবং তার ভাই সবুজের বাড়িতে গিয়ে তাদের দেখা মেলেনি। লতিফপুর কলোনী এলাকার মোফাজ্জলের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তার বড় ভাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘মোফাজ্জলের সাথে নুর আলমের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। খালিপেটে সারা রাত তারা এক সাথে মাদক সেবন করেছেন। পরে নুর আলম অসুস্থ্য হলে মোফাজ্জল নিজেই তাকে চিচিৎসকের কাছে নিয়ে যান।’
শাজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমান জানান, নুর-আলমের সাথে প্রতিবেশীদের মারপিট করায় গত ২৫ মার্চ রাতে গন্ডগ্রাম এলাকার সবুজ নামের এক ব্যক্তি নুর আলম সহ কয়েকজনের নামে মামলা করেছিল। নুর আলম ওই মামলার পালাতাক আসামি ছিল।
শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিমুদ্দিন জানান, নিহতের পক্ষ থেকে এখনও কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তবে হত্যা নাকি অন্য কিছু বিষয়টি জানতে ময়না তদন্ত করা করা হয়েছে। রিপোর্ট আসলেই জানা যাবে। এছাড়াও তদন্ত চলছে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে।