নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর সংক্রমণরোধে উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন শুরু করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত কেরু এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড। কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজার (ঈধৎব’িং ঐধহফ ঝধহরঃরুবৎ)’ নামে এই জীবাণুনাশক সোমবার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বাজারজাত করা হবে। কয়েক দিন পর থেকে এটি পুরোদমে বাজারে পাওয়া যাবে।
ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখা গেছে, কেরু উৎপাদিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ জীবাণু ধ্বংস করতে সক্ষম। ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় প্রশাসন ও কেরু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে এটি বিতরণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৬টি বিপণন কেন্দ্র, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের সামনে এ স্যানিটাইজার পাওয়া যাবে। এছাড়া, চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এটি সরবরাহ করা হবে। প্রতি ১০০ মিলিলিটার বোতলের স্যানিটাইজারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ৬০ টাকা।
উল্লেখ্য, কেরু এন্ড কোম্পানি(বাংলাদেশ) লিমিটেড চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় অবস্থিত বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের অধিভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৮ সালে স্থাপিত এ কারখানাটি উন্নতমানের স্পিরিট উৎপাদন করে আসছে। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণরোধে আরও বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে শিল্প মন্ত্রনালয়।
কর্মক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ: এর অংশ হিসেবে নিয়মিত বিরতিতে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, আইইডিসিআর কর্তৃক নির্দেশিত পন্থায় হাঁচি-কাশি দেয়া, করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা এবং জনসমাগম পরিহার করতে মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থা, মাঠ পর্যায়ের আঞ্চলিক অফিস, জেলা অফিস, শিল্পনগরি কার্যালয়, শিল্প-কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি সকল কার্যালয়, শিল্প-কারখানা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ প্রাঙ্গণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে সাময়িকভাবে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি স্থগিত করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিসিক শিল্পনগরিগুলোতে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, শিল্পনগরিগুলোর মূল ফটক এবং দর্শনযোগ্য স্থানে করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক সচেতনতামূলক ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।
কন্ট্রোল রুম স্থাপন: করোনার প্রার্দুভাবে উদ্ভুত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থাগুলোর কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
মতিঝিলে অবস্থিত শিল্প মন্ত্রণালয়ে চতুর্থ তলায় ৪১৯ নং কক্ষে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সাধারণ সেবা) প্রতুল কুমার শাহাকে মন্ত্রণালয়ের ফোকাল পয়েন্ট মনোনীত করা হয়েছে। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের কন্ট্রোল রুমের হট লাইন নম্বর +৮৮০২৯৫৫৮৪১৩, মোবাইল নম্বর ০১৭২০-০৯৮৩৬১, ই-মেইল: ঢ়ৎধঃঁষ.ংধযধ১@মসধরষ.পড়স-এ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল দপ্তর ও শাখা কার্যালয় এবং সংস্থা বা কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়সহ সকল কারখানা, আওতাধীন শিল্পনগরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসারগণ তাঁর কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম চালু করে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নির্ধারণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব কন্ট্রোল রুমের ফোকাল পয়েন্টের তথ্য সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল শিল্প মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনসহ সবাইকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার বাধ্যতামূলক: করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) এর নির্দেশনা প্রতিপালনের পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থা এবং মাঠ পর্যায়ের আঞ্চলিক অফিস, জেলা অফিস, শিল্পনগরি কার্যালয়, শিল্প-কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এসব জায়গায় কর্মরত সকল কর্মীকে দেহের তাপমাত্রা পরিমাপক থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
একই সাথে বিসিক শিল্পনগরিগুলোর কারখানা কর্তৃপক্ষ ও মালিকপক্ষকেও এ নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর আলোকে ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়সহ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল প্রতিষ্ঠানে থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিসিক শিল্পনগরিগুলোর মালিক সমিতিকে থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধ ছুটি: শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থা এবং মাঠ পর্যায়ের আঞ্চলিক অফিস, জেলা অফিস, শিল্পনগরি কার্যালয়, শিল্প-কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত কারো দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের বেশি হলে এবং সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা থাকলে অর্থাৎ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বাধ্যতামূলক সঙ্গনিরোধ ছুটি প্রদান করে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দাপ্তরিক সভা সীমিতকরণ: করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে দাপ্তরিক সভা সীমিত করার নির্দেশনা জারি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। জরুরি প্রয়োজনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কোনো সভার প্রয়োজন হলে সেগুলো সার্কুলেশনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরকেও কোনো প্রয়োজনে অফিস কক্ষে না ডেকে যথাসম্ভব ইন্টারকম, টেলিফোন, ই-মেইল ও ই-নথির মাধ্যমে যোগাযোগ করে কার্য সম্পাদনের অনুরোধ করা হয়েছে।
হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ চালু: করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য ও নির্দেশনা দ্রুত বিনিময় এবং যোগাযোগ সহজ করার জন্য কোভিড-১৯ নামে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের দপ্তর বা সংস্থার প্রধান এবং কন্ট্রোল রুমের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তারাও এই গ্রুপে যুক্ত থাকবেন।